ঢাকা,সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

চিরনিদ্রায় এন্ড্রু কিশোর জন্মস্থান রাজশাহীতেই

নিউজ ডেস্ক ::  সংগীতের টানে রাজশাহী ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছিলেন রাজধানীতে। কিন্তু কখনো জন্মস্থান রাজশাহীর কথা ভোলেননি। ছিলেন রাজশাহীর মাটি ও মানুষের সংস্পর্শে। যখনই সময় পেয়েছেন, ছুঁটে গেছেন রাজশাহীতে। তার শেষ ইচ্ছে ছিল রাজশাহীর মাটিই যেন হয় তার শেষ ঠিকানা। সেখানেই যেন চিরনিদ্রায় তাকে শায়িত করা হয়। কিংবদন্তি এই শিল্পীর শেষ ইচ্ছের প্রতি সম্মান জানিয়ে তা-ই করেছে পরিবার। নিজের দেখিয়ে যাওয়া স্থানেই গতকাল বুধবার তাঁকে সমাহিত করা হয়েছে।
একটি ছোট্ট ক্রিসমাস ট্রির নিচে চির নিদ্রায় শায়িত হয়েছেন প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোর। আর কোনো দিন তার কণ্ঠে শোনা যাবে না, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো ওগো মাটি, এই চোখ দুটো মাটি খেয়ো না…, আমি ওই না ঘরে থাকতে একা পারবো না গো পারবো না…। তবে তিনি তাঁর গানে অমর হয়ে থাকবেন লক্ষ কোটি মানুষের প্রাণে। খবর বাংলানিউজের।
সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে গত ৬ জুলাই সন্ধ্যা ৬টা ৫৫ মিনিটে রাজশাহী মহানগরীর মহিষবাথান এলাকায় থাকা বড় বোন ডা. শিখা বিশ্বাসের বাড়িতেই শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন এন্ড্রু কিশোর। এরপর তার মরদেহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘরে রাখা হয়। ছেলেমেয়ের অপেক্ষায় ১৫ জুলাই এন্ড্রু কিশোরের শেষকৃত্যানুষ্ঠানের দিন নির্ধারণ করে পরিবার।
গতকাল সকাল ৯টার পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হিমঘর থেকে কফিনে করে সিটি চার্চে নিয়ে আসা হয় দেশবরেণ্য এই সংগীত শিল্পীর মরদেহ। প্রার্থনা শেষে রাজশাহী সিটি চার্চের বাইরে কিছু সময়ের জন্য রাখা হয় তাঁর কফিন। সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য সামনেই তৈরি করা হয়েছিল অস্থায়ী মঞ্চ। সেখানে বেলা ১১টার পর্যন্ত রাখা হয়েছিল এন্ড্রু কিশোরের মরদেহবাহী কফিন। এর ওপর সবাই ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।
প্রথমেই শ্রদ্ধা জানান রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। এরপর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট, চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান। এছাড়া স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ও সাংস্কৃতিক কর্মীসহ অসংখ্য ভক্ত অনুরাগী শ্রদ্ধা জানান। রাজশাহী সিটি চার্চে প্রার্থনা ও শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তার মরদেহ সমাহিত করার জন্য পাশেই থাকা সমাধিস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়। এখন তাকে সমাহিত করা হয়। শিল্পীর শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী বরিশাল থেকে ফাদার বিশপ সৌরভকে নিয়ে আসা হয়েছিল শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের জন্য। বেলা পৌনে ১১টা পর্যন্ত চলে প্রার্থনা অনুষ্ঠান। এরপর কিছুক্ষণের জন্য চার্চের বাইরে তৈরি করা একটি মঞ্চে রাখা হয় সকলের শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্য। শেষ বিদায়ের ওই মঞ্চটি স্ত্রী-সন্তানরা নিজ হাতে করেছিলেন।
এর পর রাজশাহী শহরের কাজিহাটায় থাকা বাংলাদেশ চার্চের সিমেট্রিতে শিল্পীর পছন্দের স্থানেই তাকে সমাহিত করা হয় বেলা ১২টা ১০ মিনিটে। এ সময় রাজশাহী সিটি মেয়র এ.এইচ.এম. খায়রুজ্জামান তার সামাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। রাজশাহী সিটি চার্চের প্রার্থনা ও শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে এন্ড্রু কিশোরের সহধর্মিণী লিপিকা এন্ড্রু, তার বড় মেয়ে বড় মেয়ে মিনিম এন্ড্রু সংজ্ঞা, ছেলে জয় এন্ড্রু সপ্তক, বড় বোন ডা. শিখা বিশ্বাস, বড় বোনের স্বামী ডা. প্যাট্রিক বিপুল বিশ্বাসসহ আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু, ভক্ত অনুরাগী ছাড়া এন্ড্রু কিশোরের শুভাকাঙ্ক্ষীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে চার্চে দুই ঘণ্টার ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান শেষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার এবং রাজশাহী কলেজ শহীদ মিনারে তার মরদেহ রাখার কথা ছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতিতে ঘাটতি থাকায় এবং করোনা পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে শ্রদ্ধা জানানোর অনুষ্ঠান বাতিল করে পরিবার।
এন্ড্রু কিশোরকে যে সিমেট্রিতে সমাহিত করা হলো, সেখানে তার বাবা ক্ষীতিশ চন্দ্র বাড়ৈ এবং মা মিনু বাড়ৈকেও সমাহিত করা হয়েছিল। তবে কিশোরের সমাধি হচ্ছে তার দেখিয়ে দেওয়া জায়গায়। যেখান থেকে পরিবারের সদস্যদের সমাধি সামান্য দূরে।
রাজশাহীতে জন্ম নেওয়া এন্ড্রু কিশোর প্রায় ১৫ হাজার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। ৮ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া এই শিল্পী ক্যানসারে ভুগছিলেন। গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে তিনি সিঙ্গাপুরেই ছিলেন চিকিৎসার জন্য। কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি চিকিৎসার পরও দ্বিতীয়দফায় তার দেহে ক্যানসার বাসা বাঁধে। ফলে চিকিৎসকরা হাল ছেড়ে দেন। তাই শিল্পীর ইচ্ছায় তাকে দেশে আনা হয় গত ১১ জুন। এরপর ২০ জুন তিনি রাজশাহীতে বড় বোনের বাসায় গিয়ে উঠেন। ওই বাড়িটির একটি অংশেই রয়েছে ক্লিনিক। সেখানেই জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত সেবা চলছিল এন্ড্রু কিশোরের।

পাঠকের মতামত: